অনলাইনে কাজ করে টাকা ইনকাম: আমরা এখনও এমন এক সমাজে থাকি, যেখানে সকাল ৯-৫ টার কাজকেই অর্থ উপার্জনের আদর্শ হিসাবে দেখা হয়।
আর, এই চাকরি জীবনের বাইরে যেকোনো রোজগারের পথকেই সন্দেহের চোখে দেখা হয় বা ভাঁওতাবাজি বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়।
এবং, এই ধরা-বাঁধা চাকরি জীবনের বাইরে কোনো কাজ থেকে অর্থ রোজগার করলেই মানুষের মনে নানান ধরণের প্রশ্ন উঁকি মারে।
যেমন,
- সপ্তাহে মাত্র কয়েকদিন কাজ করেই কি রোজগার করা সম্ভব ?
- বাড়ি বসে অর্থ রোজগার কি বৈধ ?
- এই ধরণের কাজের পণ্য বা পরিষেবা গুলো কি আসল ?
আর, আপনি অনলাইনে টাকা রোজগার করার সময়ে, অনেকের কাছেই শুনতে পাবেন যে, অনলাইনে সত্যিই কি টাকা উপার্জন করা যায় ?
কিন্তু, যারা অনলাইনে অর্থ উপার্জন করে অভ্যস্ত, তারা জানেন যে, অনলাইন মাধ্যম থেকে অর্থ উপার্জন করা একেবারেই অসম্ভব নয়।
বরং, তারা পরিষ্কারভাবে বোঝেন যে, অনলাইনে টাকা ইনকাম করা হল এখনকার সময়ে দাঁড়িয়ে অন্যতম সেরা উপায়গুলোর মধ্যে একটি।
এখনকার পরিস্থিতিতে নানা ধরণের সুবিধার কারণে, বহু মানুষই অনলাইনে অর্থ উপার্জন করাকেই বেশি পছন্দ করছেন।
তাই, আমরা আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো, অনলাইনে কাজ করে টাকা ইনকাম করাটা কতটা সত্যি ? এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের কারণ ও উপায়গুলোর সম্পর্কে।
সবার প্রথমে জানি যে,
অনলাইন অর্থ উপার্জন কি জালিয়াতি বা লোক ঠকানোর ধান্দা ?
অনেক মানুষের কাছেই অনলাইন থেকে রোজগার করার মানে – কিছু না কিছু গন্ডগোল আছে।
কিন্তু, তা একেবারেই নয়।
চলুন, আগে আমরা জানি, অনলাইনে অর্থ উপার্জনের সত্যতা সম্পর্কে।
অনলাইনে টাকা ইনকাম করা একদমই জালি ব্যাপার নয়।
তবে, এখানে ভালোর পাশাপাশি খারাপ দিকগুলোও রয়েছে, আর আমাদের উচিত, চোখ-কান খোলা রেখে অনলাইন মাধ্যমকে বিশ্বাস করা।
তাই, হ্যাঁ একটা সবথেকে বড় সত্যি কথা হল এই যে, এই মাধ্যমে মানুষেরা একে অপরকে ঠকিয়ে নানানভাবে অর্থ উপার্জন করার চেষ্টা করে থাকে।
কিন্তু তার মানে এই নয় যে, প্রতিটি অনলাইন ব্যবসা জাল।
বরং, অনলাইনে অর্থ উপার্জনের অসংখ্য বৈধ উপায়ও রয়েছে।
যেগুলো নিয়ে আমরা এখানে আলোচনা করতে চলেছি।
সত্যি কথা বলতে, এই অনলাইনে টাকা রোজগারের জন্য যথেষ্ট দক্ষতা, সংকল্প ও কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজন পড়ে।
তাই, এই মাধ্যমে অর্থ রোজগার কোনোদিনই জলের মতো সোজা হয় না।
অনলাইনে কাজ করে টাকা ইনকাম করার সত্যতার পিছনের কারণগুলো:
অনলাইনে অর্থ উপার্জনের বাস্তবতা সম্পর্কে কোনো রকমের কোনো সন্দেহই নেই।
তবে, সচেতন থাকাটা সম্পূর্ণই আপনার উপর বর্তায়।
আর, এখানে আমরা আলোচনা করছি, যে কি কি কারণে অনেক মানুষ অনলাইন মাধ্যমকেই অর্থ রোজগারের উৎস হিসেবে গ্রহণ করতে চাইছেন –
১. যেকোনো জায়গা থেকে কাজের সুবিধা:
এই মাধ্যমে টাকা রোজগারের জন্যে আপনার যেকোনো জায়গা থেকে কাজ করার স্বাধীনতা দেওয়া হয়।
আপনাকে আর কোনো ফিক্সড ডেস্ক বা কর্পোরেট ফার্মে সারাদিনের মতো ঘড়ি ধরে কাজ করতে হবে না।
আপনি নিজের বাড়িতে কিংবা কোনো ক্যাফেতে বসেও আপনার কাজ সারতে পারবেন।
তার পাশাপাশি, ওয়ার্কেশান বা ভ্রমণের সময়েও আপনার সময়মতো কাজ করতে পারবেন।
অনলাইনে অর্থ উপার্জনের সময়ে আপনাকে অন্যের হয়ে কাজ করতে হবে না।
এমনকি, আপনি নিজের ব্যবসাও তৈরি করতে পারবেন।
২. প্রচুর অর্থ রোজগারের সুবিধা:
এখান থেকে রাতারাতি না হলেও, কিন্তু একটা সময়ে গিয়ে প্রচুর অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।
চাকরিতে যেখানে নির্দিষ্ট পরিমাণ বেতনের বিনিময়ে কাজ করতে হয়, সেখানে অনলাইনে আয়ের কোনো নির্দিষ্ট সীমা-পরিসীমা নেই।
এখানে আপনি যত কাজ করবেন ততই রোজগার করতে পারবেন।
৩. অনলাইন রোজগারের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সুবিধা:
অনলাইনে অর্থোপার্জনের নির্দিষ্ট পথ বার করে ফেললে, আপনি তা অন্যদেরও তা শেখাতে পারেন অর্থের বিনিময়ে।
এর জন্যে আপনি নানান ওয়ার্কশপ বা মাস্টার ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারেন।
মহামারীর সময় থেকেই এই অনলাইন ব্যবসার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।
বহু মানুষই তাদের নির্দিষ্ট আয়ের পরিপূরক উপায় খুঁজেছেন।
এমনকি, করোনা পরিস্থিতিতে যেসব মানুষেরা চাকরি হারিয়েছেন, তারা অনেকেই অনলাইনে অর্থ উপার্জনের পথকেই বেছে নিয়েছেন।
ভারতে, এই সময়ে অনলাইন ব্যবসার দ্রুত সমৃদ্ধিও ঘটছে।
আর, দেখা যাচ্ছে যে, অনেক বেশি সংখ্যক মানুষই অনলাইন ইনকামের ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
অনলাইনে অর্থ উপার্জনের বৈধ উপায় কি কি ?
আপনি যদি মনে করেন যে, শুরুর থেকেই অনলাইনে প্রচুর অর্থ উপার্জন করা যায়, তাহলে আপনার ধারণা কিন্তু সম্পূর্ণ ভুল।
এই মাধ্যম থেকে রোজগার ধরে রাখতে গেলে যথেষ্ট ধৈর্য রাখতে হয় ও অবিচল থাকতে হয়।
আর, তাই এখানে অর্থ উপার্জন শুরু করার জন্য বেশ কিছু সেরা, জনপ্রিয়, উন্নত ও বৈধ পদ্ধতি সম্পর্কে আমার নিচে আলোচনা করলাম –
১. ব্লগিং:
আর্টিকেল লিখে, ওয়েবসাইট তৈরী করে ব্লগিং করা হল অনলাইন মাধ্যমের জনপ্রিয় রোজগারগুলোর মধ্যে একটি।
ধারণা:
- ব্লগিং করে অর্থ উপার্জন করা সহজ।
- এখানে শুধুমাত্র Google-এ কনটেন্ট রাঙ্ক করতে হয়।
- ব্লগ শুরু করার সাথে সাথেই ইনকাম শুরু হয়।
- ব্লগার হিসাবে প্রতি বছর লক্ষ-লক্ষ টাকা আয় করা সম্ভব।’
সত্যতা:
- আনুমানিক প্রায় ৬০০০ লক্ষ ব্লগ আছে, যার সাথে আপনাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।
- আপনার ব্লগ আপনাকে শুরুতেই লক্ষ-লক্ষ টাকা উপার্জনের রাস্তা করে দেবে না।
- আপনার দক্ষতাতে কিভাবে মনিটাইজ বা নগদীকরণ করবেন, তা শিখতে আপনার ঘন্টার পর ঘন্টা কিংবা কয়েক মাস সময়ও লেগে যেতে পারে।
- আপনাকে কনটেন্ট দিলেই চলবে না।
- বরং, সেই কন্টেন্টগুলোকে কিভাবে মার্কেটে প্রচার করবেন বা ট্রাফিক বাড়াতে পারবেন সেটাও শিখতে হবে।
২. অনলাইন স্টোর:
অনলাইন স্টোর নিমেষে খোলা গেলেও, এখান থেকে অর্থ উপার্জন মোটেও ততটা সহজ না।
এখানে লক্ষ-লক্ষ অনলাইন স্টোর আপনার সাথে প্রতিযোগিতার জন্যে মুখিয়ে আছে।
ধারণা:
- যেকোনো অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সাইন আপ করলেই, অনলাইন স্টোর থেকে সাথে-সাথেই কেনা-বেচা শুরু করা যায়৷
- এটি প্যাসিভ ইনকামের সেরা উপায়গুলোর একটি।
- YouTube ভিডিও দেখলেই বা অনলাইন কোর্স করলেই অনলাইন স্টোর শুরু করা যায়৷
সত্যতা:
- এখানে অনন্য পণ্য নিয়ে হাজির হতে হয়।
- এখানে লক্ষ লক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানীর সাথে লড়াই করে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হয়।
- অনন্য পণ্যই আপনাকে শীর্ষে থাকতে সাহায্য করতে পারে।
- নতুন দক্ষতা শেখা ও ব্যবহার করা- দুটো পুরোপুরিই আলাদা ব্যাপার।
- স্টোর খোলা সহজ হলেও ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া বেশ শক্ত কাজ ৷
৩. YouTube চ্যানেল:
একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে রোজগার করা যায়। আজ হাজার হাজার লোকেরা বিশ্বজুড়ে নিজের ঘরে বসে ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করে লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগার করছেন।
ধারণা:
- YouTube-এ সফল হওয়ার জন্য ভালো কথা বলার দক্ষতা দরকার।
- মাত্র ৫০০ জন ফলোয়ার থেকেই রোজগার করা সম্ভব।
- YouTube চ্যানেল তৈরি করা একটা মজার কাজ।
- আপনাকে কেবলমাত্র ভিডিওই তৈরি করতে হবে।
সত্যতা:
- কয়েক বছর আগেও YouTube চ্যানেল শুরু করা সহজ ছিল।
- বর্তমানে, প্রায় হাজার হাজার ইউটিউব চ্যানেল প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে।
- এর মধ্যে মাত্র ৫% চ্যানেল নিজেদেরকে টিকিয়ে রাখতে পারে।
- এই চ্যানেল শুরু করা সহজ হলেও চালিয়ে নিয়ে যাওয়া অনেক কঠিন।
- ভিডিওর অডিয়েন্স, নিশ, ও কোয়ালিটির উপর বিশেষ নজর রাখতে হয়।
৪. ফ্রিল্যান্সিং:
মহামারীর সময় থেকেই বহু সংখ্যক মানুষ ক্রমশ ফ্রিল্যান্সের দিকে ঝুঁকছেন।
তারা কেউ ফুল-টাইম কেউবা পার্ট-টাইম হিসেবে কাজ করে থাকেন।
ফ্রিল্যান্সিং অর্থ উপার্জনের লাভজনক উপায় হলেও, এর বেশ কতগুলো নেতিবাচক দিক রয়েছে।
ধারণা:
- আপনি সহজেই প্রতি মাসে ভালো পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
- অধিক অর্থ উপার্জন জন্যে একাধিক হাই-পেয়িং ক্লায়েন্ট খুঁজতে হবে।
- এখান থেকে রোজগার করতে প্রতিদিন ২-৩ ঘন্টা কাজ করতে হবে।
সত্যতা:
- ফ্রিল্যানিং একটি লাভজনক বিকল্প মনে হলেও এখানে ফিক্সড ইনকামের কোনো গল্প নেই।
- ফ্রিল্যান্স ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়া অনেকটাই সময়সাপেক্ষ হতে পারে।
- আপনি একদিন, মাস এমনকি কয়েক বছর পরেও ক্লায়েন্ট খুঁজে পেতে পারেন।
- কোনো সময়ে আপনাকে দিনে ২-৩ ঘন্টা কিংবা কোনো কোনোদিন দিনে ১০-১২ ঘন্টাও কাজ করতে হয়।
৫. ইবুক বা অনলাইন কোর্স:
ইবুক বা অনলাইন কোর্সের টার্গেট অডিয়েন্সেরা মহামারীর শুরুতেই অনেকটা প্রসারিত হয়েছে।
তবে, এখনও পর্যন্ত বহু মানুষই এই কোর্সগুলোতে বিনিয়োগ করতে পছন্দ করেন না।
কারণ, তারা বিশ্বাস করে যে, এই কোর্সগুলোর বেশিরভাগই মূল্যহীন।
ধারণা:
- আপনি কোনো নির্দিষ্ট বিষয় বা ডোমেন সম্পর্কে আগ্রহী থাকলেই ইবুক লেখা বা অনলাইন কোর্স করানো সম্ভব।
- ইবুক বা অনলাইন কোর্স প্যাসিভ আয়ের বড় উৎস হতে পারে।
- এখানে অনলাইন কোর্স বা ইবুকের বিশাল সুযোগ আছে।
সত্যতা:
- কোনো বিষয়ে আগ্রহ থাকলেই, সেখান থেকে আর্থিক সাফল্যের নিশ্চয়তা নেই।
- আপনাকে অবশ্যই সেলস ও মার্কেটিং কৌশল শিখতে হবে।
- অনলাইনে কোর্স ও ইবুক বিক্রি করতে গেলে, একটা বড় নেটওয়ার্ক তৈরী করতে হয়।
- ইবুক কিংবা অনলাইন কোর্সগুলো দীর্ঘমেয়াদে ভালো পারফর্ম করলে, তবেই অর্থের স্থির প্রবাহ থাকবে, নাহলে নয়।
- এখনও ভারতের বহু মানুষেরা ক্লাসরুম শিক্ষাকেই বেশি গুরুত্ব দেন।
- অনলাইন কোর্স বা ইবুক কেনা তাদের কাছে অতিরিক্ত খরচ বলে মনে হয়।
পরিশেষে:
অনলাইনের ক্রমবর্ধমান ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড, বাড়িতে বসেই অর্থ উপার্জন করার দেদার সুযোগ করে দিচ্ছে।
আর, এই অনলাইন ইনকাম শুরু করতে গেলে, সেইভাবে কোনো বিশেষ দক্ষতা বা যোগ্যতার দরকার নেই।
কেবল, আপনি আপনার মনকে সেইভবাবে প্রস্তুত করুন আর অনলাইনে অর্থ উপার্জন করার চেষ্টা শুরু করে দিন।
আমাদের আজকের অনলাইন টাকা রোজগারের সত্যতা নিয়ে লেখা আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হল।
লেখাটি পছন্দ হলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।