Skip to content

আইপি ক্যামেরা কিভাবে কাজ করে?

আসসালামু আলাইকুম। সকলের জন্য শুভকামনা জানিয়ে আজকের আলোচনা শুরু করছি।

আইপি ক্যামেরা কিভাবে কাজ করে:

আইপি ক্যামেরা হচ্ছে এক ধরনের ইন্টারনেট প্রটোকল ক্যামেরা। এটা একটা ডিজিটাল ভিডিও ক্যামেরা, যা ওয়েবক্যামের মতো কাজ করে। এটা দিয়ে ইন্টারনেটের সাহায্যে ডাটা প্রেরণ ও গ্রহণ করা যায়।

সাধারন ভিডিও ক্যামেরা থেকে এটা অনেক উন্নত। কারণ এর নিজস্ব আইপি এড্রেস রয়েছে এবং শুধু ইন্টারনেট কানেকশন থাকলেই, এর দ্বারা সব ধরনের কাজ করা সম্ভব। এই আইপি ক্যামেরা সাধারণত কোন কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট বা কোন মোবাইলের সাথে নেট কানেকশনের মাধ্যমে যুক্ত থাকে।

সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে আইপি ক্যামেরা বেশি উন্নত। কারণ, সিসিটিভি ক্যামেরা অ্যানালগ ধরনের হয়ে থাকে। অর্থাৎ সিসিটিভি ক্যামেরায় একটি অক্ষ বিশিষ্ট ভিডিও ক্যাবল থাকে যা ভিডিও ফুটেজ কে ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডারে প্রেরণ করে।

অন্যদিকে আইপি ক্যামেরা শুধুমাত্র ইন্টারনেট কানেকশন এর মাধ্যমে কাজ করে। এতে কোন ক্যাবলের দরকার হয় না। এতে ওয়াইফাই, ইথারনেট ক্যাবল অথবা ইউএসবি এর মাধ্যমে একটি ভিডিও রেকর্ডার সংযুক্ত থাকে।

আইপি ক্যামেরা খুব উচ্চ মাত্রার ফুটেজ ধারন করে থাকে। প্রতিটি ক্যামেরায় একটা প্রসেসিং চিপ থাকে যা ভিডিও ফুটেজকে সংকুচিত করে রেকর্ড করে।  ক্যামেরার রেজুলেশন যত বেশি হয় তত বেশি ভিডিও রেকর্ড করতে পারে।

আর যত বেশি রেজুলেশন থাকবে তত বেশি স্টোরেজ ক্যাপাসিটি থাকে। খুব ভালো ছবি বা ভিডিও পাঠানোর জন্য আইপি ক্যামেরা ফাইলগুলোকে ছোট ও সংকুচিত করে থাকে যাতে কম ব্যান্ডউইথ দরকার হয়।

আইপি ক্যামেরার কিছু সুবিধা:

টু-ওয়ে অডিও- এই ক্যামেরা একটি স্পিকারের সাহায্যে যে কোন বিষয় একইসাথে শুনতে এবং বলতে পারে। কিছু ডোরবেল ক্যামেরায় এটি কাজ করে থাকে।

রিমোট অ্যাকসেস- এই ক্যামেরা দিয়ে যে কোন স্মার্টফোন, ট্যাবলেট বা কম্পিউটার থেকে লাইভ ভিডিও ফুটেজ দেখা যায়।

উচ্চমাত্রার রেজুলেশন- যেকোন অ্যানালগ ক্যামেরা থেকে এই ক্যামেরার রেজুলেশন ক্ষমতা প্রায় ৪গুণ।

তারবিহীন সংযোগ- ইথারনেট ক্যাবলের সাহায্যে চলে বলে এটায় অন্য কোন তারের সংযোগ প্রয়োজন হয় না।

আইপি ক্যামেরার নেটওয়ার্কের ধরন

আইপি ক্যামেরা সেট করার সময় সাধারনত তিন ধরনের নেটওয়ার্ক বাছাই করা যায়।

১. তারবিহীন নেটওয়ার্ক

২. তারযুক্ত নেটওয়ার্ক

৩. সেলুলার নেটওয়ার্ক

১. তারবিহীন নেটওয়ার্ক:

এটা ওয়াইফাই কানেকশনের মতো ডাটা গ্রহণ ও প্রেরণ করে থাকে। মোবাইল, কম্পিউটার, টেলিভিশন, বিভিন্ন গেমস বা অন্যান্য ডিভাইসের মতো আইপি ক্যামেরাও ওয়াইফাই এর মাধ্যমে চলে। আইপি ক্যামেরার আইপি এড্রেসটি ব্রাউজারে প্রবেশ করে সরাসরি ক্যামেরার ফুটেজ দেখা যাবে।

তবে এই আইপি এড্রেস যেন একটাই হয় এদিকে খেয়াল রাখতে হবে কারন কিছু কিছু সাপ্লাইয়ার তাদের কাস্টমার দের এমন আইপি এড্রেস দেয় যেটা বার বার পরিবর্তন হয়ে যায়। তাই এ বিষয়ে আগেই তাদের সাথে কথা বলে নিতে হবে যাতে আইপি এড্রেস একটাই হয় এবং সেটায় সহজেই প্রবেশ করা যায়।

২. তারযুক্ত নেটওয়ার্ক:

এই ব্যবস্থায় আইপি ক্যামেরা ইথারনেট ক্যাবল দ্বারা যুক্ত থাকে। এই সংযোগটি সবচেয়ে নিরাপদ বলে ধরা হয়। এখানে সিগনাল অন্য কোন ব্যক্তির দ্বারা অনাকাঙ্খিত হস্তক্ষেপ এর স্বীকার কম হয় এবং এই সংযোগে ডাটা ট্রান্সমিশন স্পিড ও ওয়াইফাই থেকে বেশি হয়।

৩. সেলুলার নেটওয়ার্ক:

এই সংযোগটি সবচেয়ে বেশি সুবিধাজনক কিন্তু এটি সবচেয়ে বেশি ধীরগতির। সাধারণত ওয়াইফাই ব্যবহারে ছবি আপলোড ও ডাউনলোড স্পিড বেশি হয়ে থাকে। অধিকাংশ আইপি ক্যামেরায় মোবাইলে সেট করার জন্য ট্রানমিটার দিয়ে দেয় তাই সেটা সেট আপ করাও সহজ হয়ে থাকে।

কিভাবে আইপি ক্যামেরা সেট করা যায়:

আইপি ক্যামেরা সেট করায় কোন ঝামেলা নেই। এখানে শুধুমাত্র একটি নেটওয়ার্কের দরকার হয়ে থাকে। আর যে সাইটের সাহায্যে প্রবেশ করা হবে সেটি খেয়াল করতে হবে। ক্যামেরা সেট করার সময় এর কনফিগারেশন চেক করে নিতে হবে।

সাধারনত বেশিরভাগ আইপি ক্যামেরায় এমনভাবে কনফিগার করা থাকে যেগুলাতে লাইভ ভিডিও দেখা যাবে, অবিরাম রেকর্ড করা যাবে। অথবা সময় সেট করা যায় একটি নির্দিষ্ট ঘটনার জন্য।

আইপি ক্যামেরার সংযোগের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ

আইপি ক্যামেরা সংযোগ দেয়ার সময় এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে নয়তো ডাটাগুলো হ্যাকারের কবলে পড়তে পারে। সংযোগ নেয়ার আগেই সংযোগদাতা সংস্থাকে জিজ্ঞেস করতে হবে দুইটি বিষয়ে-

১. আইপি ক্যামেরা সিস্টেম কি একক লগইন সার্টিফিকেট প্রাপ্ত?

২. ওয়ারলেস নেটওয়ার্কটি কি ব্যাক্তিগত?

অনেক আইপি ক্যামেরা ডিফল্ট ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে কনফিগার হয়ে থাকে এবং এই ডিফল্ট লগইন পরিবর্তন করা যায়। ওয়েসাইটগুলো এইসব ক্যামেরার বিভিন্ন ফুটেজ সংগ্রহ করে থাকে বিভিন্ন সুপার শপ, শপিং মল বা বিভিন্ন জায়গা থেকে।

কিন্তু সবচেয়ে খারাপ যে বিষয়টি হয়ে থাকে সেটা হলো যখন নিজের বসার ঘর বা শোবার ঘরের ফুটেজ ও কপি হয়ে যায়। অনিরাপদ আইপি এড্রেস দ্বারা সংযোগ হ্যাক হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

এই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দুইটি উপায় অবলম্বন করতে হবে। যেটি খুবই সহজ। শুধুমাত্র জানতে হবে যে আইপি ক্যামেরার লগইন ডিফল্ট থেকে পরিবর্তন হয়েছে কিনা মানে হচ্ছে ডিফল্ট লগইন অপশন পরিবর্তন করতে হবে।

এর জন্য ক্যামেরার ইন্সট্রাকশন ম্যানুয়াল দেখতে হবে অথবা কোন কোম্পানির সাহায্য নেয়া যেতে পারে যারা প্রফেশনালি আইপি ক্যামেরা সেট করে থাকে। এরপর চেক করতে হবে নিজের ওয়াইফাই সংযোগটি নিরাপদ কিনা।

নিজের ওয়াইফাই সংযোগটি প্রাইভেট করে রাখতে হবে। যদি পাবলিক দেয়া থাকে তাহলে আইপি ক্যামেরার আইপি এড্রেসটি যে জানবে সে সহজেই সেই লিংকে প্রবেশ করে ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে পাবে। এই জন্য ওয়াইফাই কানেকশন প্রাইভেট থাকলে শুধুমাত্র ব্যবহারকারি লগইন করে ক্যামেরার ফুটেজ চেক করতে পারবে।

আইপি ক্যামেরা কোথায় ব্যবহৃত হয়:

আইপি ক্যামেরা সাধারনত বাসা বাড়িতে এবং ব্যবসায়িক কারখানায় বা অফিসে বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

বাসাবাড়িতে আইপি ক্যামেরা বিভিন্ন কারণে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে সন্তানের খেয়াল ঠিকমত হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য। বাবা মা দুইজনই যদি চাকুরিজীবি থাকে তাহলে বাসায় তাদের সন্তানদের দেখাশুনার জন্য যে লোক রাখা হয় সে ঠিকমত খেয়াল রাখছে কিনা তা খুব সহজেই অফিসে বসে লক্ষ্য করা যায়।

এছাড়া বিভিন্ন শপিং মলে বা বড় বড় অফিসে কর্মচারী কর্মকর্তারা ঠিকমত কাজ করছে কিনা তা দেখার জন্য ও আইপি ক্যামেরা ব্যবহৃত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *