আইওএস এর আপডেট আসলেই আইফোন ব্যবহারকারীদের ব্যাটারি ইস্যু নিয়ে নানা ধরনের চিন্তা শুরু হয়ে যায়। আইফোন ব্যবহার যারা করে থাকেন তারা সম্ভবত সবচেয়ে বেশি চিন্তা করেন এই ব্যাটারি ইস্যু নিয়েই। অ্যাপল নিয়মিত বিরতিতে আইওএস আপডেট নিয়ে আসে। এই আপডেটে বিভিন্ন নিরাপত্তা জনিত সমস্যা সমাধান করা হয় এবং নতুন ফিচার আসে।
আইফোনের নতুন আপডেটে অনেক বড় ধরনের পরিবর্তনও এসে থাকে। কিন্তু অনেক ব্যবহারকারী নানা ধরনের ব্যাটারি ইস্যুরও সম্মুখীন হন। এর মধ্যে ব্যাটারি রান টাইম সময় কম এমনকি আইফোনের ব্যাটারি হেলথ কমে যাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দেয় মাঝে মধ্যে।
আপনি যদি আইফোন ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন এবং আপনার আইওএস আপডেট করার পরে যদি এমন সমস্যা না হয়ে থাকে তাহলে সেটা অনেক ভালো সংবাদ। কিন্তু যদি আপনি এসকল সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা কিছু টিপস এবং ট্রিকস শেয়ার করবো যাতে করে আপনি এই সমস্যায় পড়লেও সহজে কাটিয়ে উঠতে পারেন।
ধৈর্য ধারণ করুন
আইওএস আপডেট করার পরে সাময়িকভাবে ব্যাটারি ব্যাকআপ কমে যাওয়া স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। আইফোনে অপারেটিং সিস্টেম আপডেট করার সময় ব্যাকগ্রাউন্ডে অনেক বেশি পরিমানে কাজ সংঘটিত হয়ে থাকে। যার কারনে সাধারন সময়ের তুলনায় অধিক ব্যাটারি ব্যবহার হয়ে থাকে। যখন অতিরিক্ত কাজগুলো করা সম্পম্ন হয়ে যাবে তখন ব্যাটারি লাইফ আবার আগের অবস্থানে ফিরে এসে থাকে। আপনি চাইলে আপনার আইফোন একবার রিবুট করে দেখতে পারেন যে এটি সাহায্য করে কি না। তবে এর ফলে আপনার বাড়তি কোনো ক্ষতি হবে না বলে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।
কিছু সাধারণ উপায়
আইওএস আপডেট দিয়ে ব্যাটারি লাইফ এর ব্যাপারে নিম্নোক্ত উপায়গুলো আপনাকে সাহায্য করতে পারে –
- স্ক্রিন ব্রাইটনেস কমিয়ে রাখুন।
- ওয়াই ফাই এসিস্ট ফিচারটি বন্ধ করে রাখুন। আপনার ওয়াই ফাই কানেকশন যখন দূর্বল কিংবা স্লো থাকে তখন এই ফিচারের কারনে সেলুলার ডাটা ব্যবহার করা হয়। আপনি এটিকে আপনার আইফোনের সেটিংস অপশনে থাকা সেলুলার সেকশনে গিয়ে ঠিক করতে পারবেন। সেলুলার সেকশনে নিচের দিকে স্ক্রল করে আপনি ওয়াই ফাই এসিস্ট অপশনটি বন্ধ করে দিতে পারেন।
- নেটওয়ার্ক সেটিংস রিসেট করুন। এটি আপনার ব্যাটারি লাইফ ডাইনামিকালি উন্নত করতে সাহায্য করবে। এর জন্য আপনাকে আপনার আইফোনের সেটিংস অপশন থেকে জেনারেল সেকশনে থাকা ট্রান্সফার অর রিসেট আইফোন এ যেতে হবে। এর পরে রিসেটে এ ট্যাপ করে নেটওয়ার্ক সেটিংস রিসেট করতে পারবেন।
- ডার্ক মোড ব্যবহার করুন। এটি সত্যিকার অর্থে প্রচুর পরিমানে পরিবর্তন নিয়ে আসে।
অ্যাপ আপডেট করুন
হতে পারে আপনার এই সমস্যাটি আপনার আইওএস এর জন্য না হয়ে আপনার ফোনে থাকা আপডেট না হওয়া সকল অ্যাপসের জন্য হচ্ছে। সেজন্য আপনার ফোনে যদি এমন সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে তাহলে সেই সমস্যার পিছনে অযথা অনেক সময় না দিয়ে সবার আগে সকল অ্যাপ আপডেট করার চেষ্টা করুন। আপনার আইফোনে থাকা অ্যাপ স্টোর থেকে কর্ণারে থাকা প্রোফাইল আইকনে ট্যাপ করুন। পরবর্তীতে নিচে স্ক্রল করে কোনো অ্যাপ এ আপডেট দরকার কিনা সেটি ভালো করে পরীক্ষা করে নিন।
আপনার ব্যাটারি বেশি খরচ কে করছে খুঁজে বের করুন
যদি এসকল উপায়েও আপনার কোনো সমাধান না এসে থাকে তাহলে আপনার কোন অ্যাপ বেশি ব্যাটারি খরচ করছে সেটি খুঁজে বের করুন। আইফোনে আপনি খুব সহজেই আপনার ব্যাটারির সকল তথ্য পেয়ে যাবেন। প্রথমে সেটিংস অপশনে গিয়ে ব্যাটারি সেকশনে প্রবেশ করুন। এখানে আপনি অসংখ্য তথ্য পেয়ে যাবেন যার মধ্যে কোন অ্যাপ কতটুকু ব্যাটারি খরচ করছে সেটিও পেয়ে যাবেন।
আপনি এখান থেকে কোন অ্যাপ স্ক্রিনে থাকা অবস্থায় কতটুকু ব্যাটারি ব্যবহার করছে সেটির পাশাপাশি ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকা অবস্থায় কোন অ্যাপ কতটুকু ব্যাটারি খরচ করছে সে বিষয়েও আইডিয়া পেয়ে যাবেন। আপনি এই সকল তথ্য পর্যবেক্ষণ করে ব্যাটারি ড্রেইন ইস্যুর সমাধান করতে পারেন।
ব্যাটারি পরিবর্তনের প্রয়োজন কি না দেখে নিন
আপনার ব্যবহার করা আইফোন যদি ৪ বছর বা তার অধিক সময় পুরানো হয়ে থাকে তাহলে এটির ব্যাটারি পরিবর্তন করার প্রয়োজন। এছাড়া আপনার ফোনের ব্যাটারির হেলথ যদি ৮০% এর নিচে নেমে আসে তাহলে আপনার ফোনের ব্যাটারি পরিবর্তন করা উচিত। আপনি আপনার ফোন থেকেই খুব সহজেই ব্যাটারি হেলথ সম্পর্কে জানতে পারবেন। সেটিংস এ থাকা ব্যাটারি সেকশন থেকে ব্যাটারি হেলথ এন্ড চার্জিং এ গেলে আপনি আপনার ব্যাটারি হেলথ সম্পর্কে জানতে পারবেন।
ওভারহিটিং হওয়া বন্ধ রাখুন
আপনার আইফোনকে ওভারহিটিং হওয়া থেকে বিরত রাখুন। ফোন ওভার হিট হলে খুব সহজেই হার্ডওয়্যার ড্যামেজ হতে পারে। একটি গরম ব্যাটারি আপনার ফোনের পারফমেন্স এর ক্ষেত্রে বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই আপনার ব্যবহার করা আইফোনটি কখনো ওভার হিট হচ্ছে কি না সে সম্পর্কে বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখুন। চার্জিং এর সময় আইফোন ওভার হিট হবার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে। তাই আপনার আইফোন চার্জ দেওয়ার সময় দরকার পড়লে ফোনের কেস খুলে তারপরে চার্জে রাখুন। এছাড়া অতিরিক্ত গরম স্থান থেকে আপনার আইফোনকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন।
পরবর্তী আইওএস আপডেট আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন
কিছু কিছু সময় আপনার এ সকল সমস্যা থেকে দূর হবার জন্য পরবর্তী আইওএস আপডেট হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগতে পারে। অ্যাপল তাদের সকল আইওএস আপডেটেই ফোনে থাকা সমস্ত সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করে থাকে। পূর্বের তুলনায় বর্তমানে তাদের আপডেটে ব্যবহারকারীদের সমস্যার দিকে বেশি নজর দেওয়া হয়। তাই আপনাকে নতুন আইওএস এর আপডেট আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে একটু ঝুঁকি নিতে হবে কারন এমনও হতে পারে পরবর্তী আপডেট এর সময় আপনার সমস্যার সমাধান নাও হতে পারে এমনকি বেড়েও যেতে পারে।
অ্যাপল তাদের সকল আইওএস আপডেট এর মাধ্যমে সকল প্রকার সিকিউরিটি ফাইল আপডেট করে থাকে। তাই নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে আপনাকে সকল ধরনের আপডেট করে নেওয়া উচিত। এর ফলে আপনার আলাদা কোনো ঝুঁকি থাকবে না। আশা করি আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য প্রদান করবে। আমাদের এই আর্টিকেলটি কেমন লেগেছে সে সম্পর্কে আপনাদের মতামত আমাদের কমেন্ট এর মাধ্যমে জানিয়ে দিন।