পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস হলো আপওয়ার্ক। নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়া একটি চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। অনেক সময় নতুন ফ্রিল্যান্সাররা কাজ শেখার পরেও সঠিক ক্লায়েন্ট খুঁজে না পাওয়ার কারণে কাজ ছেড়ে দেয়। আপওয়ার্ক হল এমন একটি প্লাটফর্ম যার মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সার এবং একজন ক্লায়েন্ট এর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন সম্পন্ন হয়ে থাকে।
আপওয়ার্ক মূলত একটি অনলাইন জব ওয়েবসাইট। আপওয়ার্ক মার্কেটপ্লেস এর মাধ্যমে আপনি যদি একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ক্লায়েন্ট খুঁজেন তাহলে সহজেই পেয়ে যাবেন। আবার যদি একজন ক্লায়েন্ট হিসেবে ফ্রিল্যান্সার খুঁজেন তাহলেও দ্রুত যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবেন। আপওয়ার্কে বর্তমানে প্রায় ১ কোটির বেশি ফ্রিল্যান্সার কাজ করে যাচ্ছেন।
প্রায়ই আপওয়ার্কের পক্ষ থেকে তাদের ফ্রিল্যান্সারদের একাউন্ট ব্যান কিংবা সাসপেন্ড অথবা হোল্ড করার খবর পাওয়া যায়। আপওয়ার্ক নিরাপত্তা জনিত কারণে তাদের ফ্রিল্যান্সারদের প্রতি আরোপ করা নীতিমালা আগের তুলনায় আরো কঠিনভাবে পালন করছে।
আপওয়ার্কের একাউন্ট কেন সাসপেন্ড হয়?
আপওয়ার্ক কোনো কারণ ছাড়া কখনো কোন ফ্রিল্যান্সারের অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড করে না। আপনি যদি আপওয়ার্ক এ ফ্রিল্যান্সিং করার মাধ্যমে আপনার জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন তাহলে কিছু জিনিসের উপর খেয়াল রাখার মাধ্যমে আপনার একাউন্ট সাসপেন্ড হওয়া থেকে বাঁচাতে পারেন। আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা আপওয়ার্কে একাউন্ট ব্যান হওয়ার কারন এবং একাউন্ট ব্যান হওয়া থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আপওয়ার্ক এর একাউন্ট সাসপেন্ড হওয়ার পেছনে কিছু নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। আপওয়ার্ক অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের নিম্নোক্ত বিষয় সম্পর্কে সচেতন থাকলে অনাকাঙ্ক্ষিত অ্যাকাউন্ট ব্যান, সাসপেনশন কিংবা হোল্ড থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
এক পিসি থেকে একাধিক একাউন্ট খোলা
একই পিসি বা আইপি থেকে একাধিক আপওয়ার্ক একাউন্ট তৈরি করা আপওয়ার্ক একাউন্ট ব্যান বা সাসপেন্ড হবার অন্যতম প্রধান কারন হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রফেশনাল কোনো ব্যক্তি কখনোই তার কাজ নিজের পিসি বাদে অন্য কোথাও করে না আবার তারা কখনো নিজের পিসিতে অন্য কোনো একাউন্টও লগ ইন করবে না। সাবধানতার খাতিরেই নিজের আইপি থেকে অন্য আপওয়ার্ক একাউন্টধারীর একাউন্টেও লগ ইন করা যাবে না। এমনকি ক্লায়েন্ট তার একাউন্টে ঢুকতে বললেও সেটি করা যাবে না।
অন্যের প্রোফাইল নকল করা
আপওয়ার্ক একাউন্ট ব্যান বা সাসপেন্ড হওয়ার অন্যতম কারন হলো অন্যের প্রোফাইল নকল করা। একজন ফ্রিল্যান্সার চাইলে অন্য কাউকে অনুসরণ করতে পারেন কিন্তু কখনোই তাকে অনুকরণ করতে পারেন না। তবে অনেক ফ্রিল্যান্সার বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশের অনেক বড় বড় ফ্রিল্যান্সারদের প্রোফাইল পুরোপুরি নকল করে ফেলেন। অনেকের জন্য এই কাজটি সময় বাঁচিয়ে তুললেও এটি ভবিষ্যতে মোটেই আশানুরূপ ফল দিবে না। আপনি যখন কোন ফ্রিল্যান্সারের প্রোফাইলে রাখা কনটেন্ট গুলো নিজের প্রোফাইলে রাখবেন সেগুলো কোনো না কোনো সময় কারো না কারো চোখে অবশ্যই পড়বে। তাছাড়া আপওয়ার্ক কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির মাধ্যমে বিষয়টি সনাক্ত করতে পারে। আপওয়ার্ক আপনার বিরুদ্ধে এরকম কোনো ব্যাপার সনাক্ত করতে পারলে অবশ্যই ব্যবস্থা নিবে।
পোর্টফোলিও আইটেম চুরি
পোর্টফোলিও বলতে মূলত আগে করা কাজগুলোর আর্কাইভকে বোঝায়। যদি কোনো ফ্রিল্যান্সার অন্য কারো আইটেম চুরি করে নিজের বলে চালিয়ে দেন তাহলে সেটি অবশ্যই ঘৃণ্য অপরাধ। তাছাড়া কোনো ফ্রিল্যান্সার যদি নিজে কাজ জানেন তাহলে অবশ্যই তার অন্যের কাজ চুরি করে দেখাতে হবে না। আপওয়ার্ক এসব ক্ষেত্রে অনেক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।
কভার লেটার স্প্যামিং
ফ্রিল্যান্সিং করার ক্ষেত্রে ইংরেজিতে পারদর্শী হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন ফ্রিল্যান্সারের অন্তত প্রজেক্ট এর চাহিদা বোঝা কিংবা সে অনুযায়ী ক্লায়েন্টের সাথে সাবলীলভাবে যোগাযোগ করার ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। আপওয়ার্ক একাউন্ট ব্যান বা সাসপেন্ড হওয়ার অন্যতম কারণ হলো কাভার লেটার স্প্যামিং। যাকে সোজা বাংলায় কপি পেস্ট বলে। বার বার একই ধরনের কভার লেটার স্প্যামিং একজন ফ্রিল্যান্সারের আপওয়ার্ক একাউন্ট নষ্ট হবার পিছে দায়ী হতে পারে।
কন্টাক্ট ইনফরমেশন শেয়ার
আপওয়ার্ক পলিসিতে মার্কেটপ্লেসে কোনো ধরনের কন্টাক্ট ইনফরমেশন শেয়ার করার ব্যাপারে কঠোর বিধি নিষেধ আছে। অনেক সময় ক্লায়েন্টই তাদের জব পোস্টে ফ্রিল্যান্সারদের স্কাইপি আইডি চেয়ে থাকে। তবে এক্ষেত্রে ক্লায়েন্টের সাথে এ বিষয়ে নিশ্চয়তা নিতে হবে যে সকল প্রকার আর্থিক লেনদেন আপওয়ার্কেই হবে। এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা নিয়ে কাজ করলে ফ্রিল্যান্সারদের কোনো প্রকার সমস্যা হবে না।
মাত্রাতিরিক্ত ম্যানুয়াল আওয়ার যোগ করা
ক্লায়েন্ট নতুন অথবা কাজ দেওয়ার পরে যদি কোনো কারনে Hourly Limit সেট না করে থাকে তাহলে ফ্রিল্যান্সার সেই সুযোগের ফায়দা তুলতে পারে। ট্র্যাকার দ্বারা কাজের সময় গুলো ট্র্যাক না করে নিজের ইচ্ছা মতো বসিয়ে ম্যানুয়াল আওয়ার বসিয়ে দিলে ক্লায়েন্ট জেনে গেলে বিপদের মুখে পড়ে যাবে। এসব ব্যাপার আপওয়ার্ক কর্তৃপক্ষ জেনে গেলে ফ্রিল্যান্সারদের একাউন্ট ব্যান কিংবা সাসপেন্ড করে দিতে পারে।
বায়ারের সাথে অন্যায্য বাকবিতন্ডা করা
বায়ারের সাথে ফ্রিল্যান্সাররা যদি কোনো অন্যায্য বাকবিতন্ডা করে থাকে তাহলে বায়াররা চাইলে ফ্রিল্যান্সারের বিরুদ্ধে আপওয়ার্ক কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ জানাতে পারবে। তখন যদি আপওয়ার্ক ওই ফ্রিল্যান্সার এর বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রমান পেয়ে যায় তাহলে সেই ফ্রিল্যান্সারের একাউন্ট ব্যান কিংব সাসপেন্ড করে ফেলতে পারবে। তাই আপওয়ার্কে কোনো বায়ার বা ক্লায়েন্টের সাথে অহেতুক কোনো প্রকার ঝামেলাতে না জড়ানোই সবচেয়ে ভালো হবে।
বায়ার বা ক্লায়েন্টের একাউন্ট সাসপেন্ড কেন হয়?
শুধুমাত্র ফ্রিল্যান্সারদের একাউন্ট যে সাসপেন্ড কিংবা ব্যান হয়ে যায় তা কিন্তু না। অনেক সময় ক্লায়েন্ট বা বায়ারের আইডিও ব্যান হয়ে যেতে পারে। বায়ার বা ক্লায়েন্ট যদি কোনো এজেন্সি হয়ে থাকে এবং তারা যদি নিজেদের এজেন্সির লোকদের কাজের জন্য হায়ার করে তাহলে একাউন্ট ব্যান হবার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও ভুয়া পেপাল আইডি পেমেন্ট মেথড হিসেবে ব্যবহার করলেও বায়ার বা ক্লায়েন্টের আইডি সাসপেন্ড হয়ে যেতে পারে।
এছাড়া অনেকসময় বায়ারদের কার্ড কিংবা একাউন্টে টাকা না থাকলে একাউন্ট এর কাজ ব্যাহত হতে পারে। সেক্ষেত্রে পুনরায় টাকা ঢুকিয়ে নিলে আগের মতো কাজ চলতে থাকবে। আবার ফ্রিল্যান্সারদের সাথে জব চলমান অবস্থায় যদি ক্লায়েন্টের মেসেজের উত্তর না প্রদান করে তাহলে ক্লায়েন্ট এ ব্যাপারে আপওয়ার্ক সাপোর্ট সেন্টারে জানাতে পারবে। তখন আপওয়ার্ক ওই বায়ার বা ক্লায়েন্টের উপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
আপওয়ার্ক অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস। এখানে সততা এবং নিষ্ঠার সাথে কাজ করে অনেকেই তাদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারবে। আপওয়ার্কের একাউন্ট ব্যান হবার কারন সম্পর্কিত আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লেগেছে তা আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারবেন। নিত্য নতুন প্রযুক্তি বিষয়ক সকল প্রকার তথ্য এবং টিপস পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।