Skip to content

কম্পিউটারে ট্রাবলশুটিং কি? জানুন কিছু দরকারি ট্রাবলশুটিং

ইলেকট্রনিক যন্ত্র ব্যবহার করেছে কিন্তু কখনো কোনো প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হয়নি এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। এই সকল সমস্যার মধ্যে কিছু কিছু সমস্যা খুবই সাধারণ আবার কিছু সমস্যা খুবই জটিল হতে পারে। যদি সমস্যা খুবই সাধারণ হয় তাহলে যে কেউই সেটি সমাধান করতে পার। তবে জটিল সমস্যার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ কারো মাধ্যমে ঠিক করাতে হয়।

কম্পিউটার বা কোনো যন্ত্রই এর ব্যতিক্রম নয়। আমরা যখন বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্র কিনি তখন সেটির সাথে একটি ব্যবহার নির্দেশিকা বা ম্যানুয়াল পেয়ে থাকি। আমরা অনেকেই মনে করি এই ব্যবহার নির্দেশিকা বা ম্যানুয়াল এর কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু এই ম্যানুয়াল দেখে খুব সহজেই ছোটো খাটো সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। আজকের আর্টিকেলে আমরা কম্পিউটারের ট্রাবলশুটিং সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

ট্রাবলশুটিং কি?

কম্পিউটারের বিভিন্ন সমস্যার উৎস বা উৎপত্তিস্থল নির্ণয় প্রক্রিয়া হলো কম্পিউটার ট্রাবলশুটিং। ট্রাবলশুটিংয়ে সাধারণত কিছু প্রশ্ন উপস্থাপন করা হয় এবং পাশাপাশি এর সমাধান দেওয়া থাকে। কম্পিউটার ব্যবহারকারী তার কম্পিউটারের সমস্যার প্রকৃতি অনুযায়ী সমাধান অনুসরণের মাধ্যমে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সমস্যাটির সমাধান করতে পারে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে কম্পিউটারের সমস্যা চিহ্নিত করা, সমস্যাগুলো সমাধানের কার্যকরী ব্যবস্থা প্রয়োগ করা এবং সর্বশেষে সমস্যা থেকে উত্তরণ হওয়া, এ সকল প্রক্রিয়াই হল কম্পিউটার ট্রাবলশুটিং।

ট্রাবলশুটিং কয় ধরনের?

কম্পিউটার ট্রাবলশুটিং প্রধানত দুই প্রকার। সেগুলো হলো কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ট্রাবলশুটিং এবং কম্পিউটার সফটওয়্যার ট্রাবলশুটিং।

কম্পিউটার সফটওয়্যার ট্রাবলশুটিং

কম্পিউটারের নিষ্প্রাণ হার্ডওয়্যারকে যথাযথভাবে কর্মক্ষম বা কাজের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য ব্যবহৃত বিশেষ নির্দেশনা বা প্রোগ্রামই হলো কম্পিউটার সফটওয়্যার। কম্পিউটারের অভ্যন্তরীণ প্রাণ বা চালিকা শক্তি হলো কম্পিউটারের সফটওয়্যার। কিন্ত এটিকে স্পর্শ করা যায় না। তবে কর্ম সম্পাদনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে সফটওয়্যার। আর এ সকল সফটওয়্যারের সাধারণ সমস্যা বা ত্রুটি নির্ণয় ও সমাধান প্রক্রিয়ায় হলো কম্পিউটার সফটওয়্যার ট্রাবলশুটিং।

কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ট্রাবলশুটিং

কম্পিউটারের বাহ্যিক অবকাঠামো তৈরির জন্য ব্যবহৃত যন্ত্র সামগ্রীকে হার্ডওয়্যার বলে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে কম্পিউটারের যে সকল অংশ ধরা, ছোঁয়া বা স্পর্শ করা যায় তাদেরকে হার্ডওয়্যার বলা হয়ে থাকে। কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার সামগ্রীর মধ্যে ইনপুট ডিভাইস, আউটপুট ডিভাইস, প্রসেসর, র‍্যাম ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

কম্পিউটার ট্রাবলশুটিং এর কিছু সাধারণ উদাহরণ

ডিসপ্লে বা কিংবা বিপ সাউন্ড কোনটিই না আসা

অনেক সময় ডেস্কটপ কম্পিউটারের মাদারবোর্ড নষ্ট হয়ে গেলে এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে এজন্য অন্য একটি মাদারবোর্ড লাগিয়ে পরীক্ষা করতে হবে। বিদ্যমান মাদারবোর্ডটি যদি ত্রুটিপূর্ণ কিংবা সমস্যাযুক্ত হয় তাহলে নতুন একটি মাদারবোর্ড কিনে ব্যবহার করলে সমস্যাটি থেকে সমাধান পাওয়া যেতে পারে।

ডেস্কটপ কম্পিউটার চালু করলে বুট না হয়ে Wait মেসেজ দেখানো এবং বিপ শব্দ না হওয়া

সাধারণত মাদারবোর্ডের সাথে সংযুক্ত ক্যাবলগুলোর সংযোগ ঢিলা থাকলে কিংবা মাদারবোর্ডে সমস্যা থাকলে এই সমস্যাটি হতে পারে। এই সমস্যা দেখা দিলে মাদারবোর্ডের সাথে সংযোজিত ক্যাবলগুলোর কানেকশন পরীক্ষা করতে হবে। কোনো ক্যাবল ঢিলা থাকলে সেগুলো যথাযথভাবে লাগিয়ে দিতে হবে। এছাড়া মাদারবোর্ডের সমস্যা খোঁজার জন্য অন্য একটি ভালো মাদারবোর্ড লাগিয়ে দেখা যেতে পারে। সমস্যা পেলে মাদারবোর্ড পরিবর্তন করে নিতে হবে।

কীবোর্ড কাজ না করা

কীবোর্ড কাজ না করা মোটামুটি কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের কাছে খুবই সাধারন একটি সমস্যা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কী বোর্ডের ক্যাবলটি যথাযথ ভাবে সংযুক্ত না থাকার কারণে এই সমস্যাটি দেখা দেয়। এই সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে কী বোর্ডের ক্যাবলটি খুলে সঠিকভাবে পোর্টে পুনরায় লাগিয়ে দিতে হবে। এছাড়া কম্পিউটার রিস্টার্ট করে দেখা যেতে পারে। তবে এসব কিছুর পর ও যদি কাজ না করে তাহলে বুঝতে হবে কী বোর্ডটি নষ্ট। নতুন একটি কী বোর্ড কিনে এনে ব্যবহার করতে হবে।

মাউস কাজ না করা

মাউসের ক্যাবল সঠিকভাবে সংযুক্ত না থাকলে অথবা মাউস নষ্ট হয়ে গেলেও কাজ না করতে পারে। এক্ষেত্রে মাউসটি খুলে পুনরায় লাগিয়ে নিতে হবে। এরপর ও যদি কাজ না হয় তাহলে নতুন একটি মাউস লাগিয়ে নিতে হবে।

কম্পিউটার ঘন ঘন রিস্টার্ট হওয়া

কম্পিউটার ঘনঘন রিস্টার্ট হওয়া খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। অতিরিক্ত গরমের কারনে কিংবা প্রসেসরের কুলিং ফ্যান না ঘুরলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার ডিসপ্লে বা অন্যান্য ব্যবহৃত কোনো কার্ডের হিট স্কিল খুলে গেলে অথবা অপারেটিং সিস্টেম বা কোনো সফটওয়্যারের সমস্যা থাকলে এই সমস্যা হতে পারে। যদি কখনো এই সমস্যা দেখা দেয় তাহলে মাদারবোর্ডের সাথে লাগানো প্রসেসরের ফ্যানটি পরীক্ষা করতে হবে। কুলিং ফ্যান ঠিকমতো ভালো স্পিডে ঘুরছে কি না সে ব্যাপারেও খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে ময়লা পরিষ্কার করতে হবে। ফ্যান নষ্ট থাকলে ভালো একটি ফ্যান লাগিয়ে নিতে হবে। পাওয়ার সাপ্লাই এর ফ্যান ও পরীক্ষা করতে হবে।

Insert system disk and Press any key to Continue মেসেজ দেখানো

হার্ডডিস্ক থেকে সিস্টেম ফাইল মুছে গেলে কিংবা হার্ডডিস্ক নষ্ট হয়ে গেলে এই সমস্যাটি দেখা দিতে পারে। আবার অনেক সময় পাওয়ার কানেকশন ঠিকভাবে না থাকলেও এই সমস্য হতে পারে। এই সমস্যা সমাধান করার জন্য Setup Utility থেকে IDE/SATA HDD Auto Detection চেপে দেখতে হবে। যদি এই কাজ করার পরে হার্ডডিস্ক ডিটেক্ট করা সম্ভব হয় তাহলে বুঝতে হবে হার্ডডিস্ক ঠিক আছে। এক্ষেত্রে একটি বুটেবল ডিস্ক থেকে কম্পিউটার বুট করতে হবে। এছাড়াও হার্ডডিস্ক এর সাথে মাদারবোর্ড এর ক্যাবল খুলে লাগিয়ে দেখতে হবে। তারপর ও কাজ না হলে হার্ডডিস্ক নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই নতুন হার্ডডিস্ক লাগিয়ে নিতে হবে।

CKSUM ERROR মেসেজ দেখানো

বায়োস চিপ যদি মাদারবোর্ডের সাথে সঠিকভাবে বসানো না থাকে তাহলে এ সমস্যাটি দেখা দিতে পারে। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য বায়োস বসানোর ক্ষেত্রে ঠিক মতো সকেটে বায়োস চিপটি বসানো হয়েছে কিনা সেটি খেয়াল রাখতে হবে

কম্পিউটারে অডিও ড্রাইভার ইন্সটল থাকলেও সাউন্ড না আসা

অনেক সময় দেখা যায় যে কম্পিউটারে অডিও ড্রাইভার ইন্সটল করা থাকলেও ঠিকমতো সাউন্ড আসে না। সিস্টেমের পেছনের দিকে সঠিকভাবে জ্যাক লাগানো না থাকলে কিংবা স্পিকার অথবা স্পিকারের ক্যাবলে সমস্যা থাকলে এরকম হতে পারে। এই সমস্যা থেকে উত্তরনের জন্য সিস্টেমের পেছনের দিকের জ্যাকটি সঠিকভাবে লাগানো আছে কি না পরীক্ষা করতে হবে। এছাড়াও স্পিকার এবং স্পিকারের ক্যাবল পরিবর্তন করে দেখতে হবে সেগুলোতে কোনো প্রকার সমস্যা আছে কি না।

কোনো একটি প্রোগ্রাম বা ফাইল রান করার সময় Out of Memory মেসেজ দেখা

একসাথে একাধিক ডকুমেন্ট বা প্রোগ্রাম ওপেন করা থাকলে এমন সমস্যা দেখা যেতে পারে। এজন্য একাধিক ডকুমেন্ট বা প্রোগ্রাম একসাথে ওপেন করা থাকলে যেগুলোর প্রয়োজন নেই সেগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে ফাইলটি বা প্রোগ্রামটি ওপেন করতে হবে তার ধারনক্ষমতার মতো র‍্যাম কম্পিউটারে না থাকলেও এই সমস্যাটি দেখা দিতে পারে। কম্পিউটারের র‍্যামের পরিমাণ কম হলে তা অবিলম্বে বাড়িয়ে নিতে হবে। তাতে যে কোনো কাজ আপনি আরো দ্রুত করতে পারবেন।

কিছু কিছু সময় বিশেষ কোন সফটওয়্যার এর ক্ষেত্রে এমন সমস্যা হলে বুঝতে হবে সফটওয়্যারটিতে সমস্যা আছে কিংবা কিছু ফাইল মিসিং আছে। এ সমস্যা হলে বিশেষ সফটওয়্যারটি আনইন্সটল করে আবার ইনস্টল করতে হবে। মাঝে মাঝে শুধু মাত্র কম্পিউটার রিস্টার্ট করেও দেখা যেতে পারে।

Boot Disk Failure মেসেজ দেখানো

IDE বা SATA ক্যাবল লুজ থাকলে কিংবা হার্ডডিস্ক নষ্ট থাকলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর জন্য IDE বা শাটা ক্যাবল ঢিলা থাকলে সেটি যথাযথ ভাবে খুলে আবার লাগিয়ে দিতে পারে। এরপর কম্পিউটার চালু করতে হবে। আশা করা যায় যে অন্য কোনো সমস্যা না থাকলে কম্পিউটারটি চালু হয়ে যাবে।

ট্রাবল এর হাত থেকে রক্ষা পাবার নিয়ম

কম্পিউটারকে সমস্যা বা ট্রাবল থেকে রক্ষা করার জন্য নিম্নে বর্ণিত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করতে হবে।

  • কম্পিউটার রুমের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • প্রয়োজনীয় ফাইল কিংবা সফটওয়্যার বা ডাটার ব্যাকআপ রাখতে হবে।
  • হার্ডডিস্ককে সব সময় কিছু জায়গা খালি রাখতে হবে।
  • মাঝে মাঝে ডিস্ক ডিফ্র্যাগমেন্টেশন করতে হবে।
  • ভাইরাসের সমস্যার হাত থেকে বাঁচার জন্য ভালো মানের এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে।
  • অপ্রয়োজনীয় সকল সফটওয়্যার আন ইন্সটল করতে হবে।
  • কম্পিউটার ব্যবহার করার পরে ঢেকে রাখতে হবে এবং নিয়মিত ধুলাবালি পরিষ্কার করতে হবে।
  • যদি সম্ভব হয় তাহলে ইউপিএস ব্যবহার করতে হবে।
  • নির্দিষ্ট সময় পর পর কম্পিউটারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ এবং আনুষাঙ্গিক যন্ত্রাংশ পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
  • সিপিইউ কিংবা মনিটরের বাইরের আবরণ খুলে ভিতরের ময়লা ভ্যাকিউম ক্লিনার অথবা ব্লোয়ার দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে

কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের প্রতিনিয়তই কোনো না কোনো সমস্যায় পড়তে হয়। তাই সহজ সমস্যাগুলোর সমাধান আগে থেকে জেনে নিলে ব্যবহারকারী নিজেই সেই সমস্যার সমাধান করতে পারবে। কম্পিউটারের ট্রাবল শুটিং সম্পর্কিত আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লেগেছে তা আমাদের কমেন্ট করে জানান। নতুন সব প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য এবং টিপস জানতে সব সময় চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *