ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই প্রচুর কৌতূহল রয়েছে। অনেকে হয়তো নতুন ক্রেডিট কার্ড নেয়ার কথাও ভাবছেন। তবে ক্রেডিট কার্ড ব্যাপারটি কিছুটা জটিল হওয়ায় অনেকেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যায় ভোগেন। ক্রেডিট কার্ড অনেকটাই পার্সোনাল লোনের মতো।
ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ব্যাংক আসলে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত ধার দিচ্ছে। এই ধার আপনাকে পরবর্তীতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধ করে দিতে হয় কিংবা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে এর বিপরীতে সুদ বা ইন্টারেস্ট ব্যাংককে প্রদান করতে হয়। আর সঠিক সময়ে নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থেকে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে যথেষ্ট সুবিধা রয়েছে।
অনেকেই বড় বা দামী কিছু কেনার ক্ষেত্রে হঠাৎ করে বেশি পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে পারেন না। কেননা এতে করে দৈনন্দিন জীবনে টানা-পোড়েনের মাঝে পড়ে যেতে হয়। এসময় ক্রেডিট কার্ড খুব কাজে দিতে পারে। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বড় কিছু কিনে আপনি সহজে সেই অর্থ প্রতি মাসে অল্প অল্প করে শোধ করে দিতে পারেন।
তবে ক্রেডিট কার্ড যে শুধু সুবিধা নিয়ে আসে তাই নয়, সঠিক ব্যবহার না করলে ক্রেডিট কার্ড হতে পারে গলার কাঁটা। কেননা অনেকেই না বুঝে ক্রেডিট কার্ডের অধিকাংশ ব্যালেন্স খরচ করে ফেলেন এবং পরবর্তীতে এই টাকা শোধ দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে যান।
ক্রেডিট কার্ডের সঠিক ব্যবহার ও ক্রেডিট কার্ডের যেসব ভুল করা উচিত নয় সেগুলো নিয়ে জেনে নিতে পারেন পূর্বের বিভিন্ন পোস্ট থেকে। ক্রেডিট কার্ড নেয়ার আগে কিছু ব্যাপারে সঠিক তথ্য নিয়ে তবেই কোন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড নেবেন সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। বর্তমানে দেশের অধিকাংশ ব্যাংকই ক্রেডিট কার্ড দিচ্ছে আপনার আয়ের উপর নির্ভর করে। এছাড়া ব্যাংক ছাড়াও বেশ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ক্রেডিট কার্ড দিচ্ছে। কোন ব্যাংকের বা প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট কার্ড আপনার নেয়া উচিত সে বিষয়ে আজকের পোস্টে আলোচনা থাকছে। তো চলুন জেনে নেই ক্রেডিট কার্ড নেয়ার আগে কী কী বিষয় ভেবে দেখা উচিত আপনার।
ব্যাংকের অবস্থা
দেশে অনেক সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক রয়েছে বর্তমানে। তবে সব ব্যাংক নিজেদেরকে এখনও সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। কাজেই নতুন কিংবা কম পরিচিত ব্যাংকগুলোর ক্রেডিট কার্ড নেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকা উচিত। এসব ব্যাংক হয়তো অন্যান্য বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড থেকে অনেক আকর্ষণীয় সুবিধা দিয়ে ক্রেডিট কার্ড দেয়ার প্রস্তাব দেবে। তবে এসব ব্যাংকের হিডেন চার্জ বা অন্যান্য বিভিন্ন সমস্যা থাকার সম্ভাবনা থাকে বেশি। কাজেই ক্রেডিট কার্ড নিলে প্রতিষ্ঠিত ও সুনাম রয়েছে এমন ব্যাংককেই গুরুত্ব দেয়া উচিত।
ব্যাংকের শাখা ও গ্রাহক সেবা
ক্রেডিট কার্ড নেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকের শাখা বা গ্রাহক সেবার মান সম্পর্কে জেনে নেয়া উচিত। যেসব ব্যাংকের সারা দেশেই শাখা রয়েছে এবং আপনার অবস্থানের খুব কাছেই তাদের সেবা পাওয়া যায় এমন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড নেয়া উত্তম। কেননা টাকা জমা কিংবা বিল পেমেন্টের ক্ষেত্রে মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন শাখায় যাওয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। এছাড়া গ্রাহক সেবার মান উন্নত কিনা এই ব্যাপারটিও জেনে নেয়া উচিত। কেননা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে যে কোন সমস্যায় দ্রুত সমাধান পাওয়া যায় তাহলে।
হিডেন চার্জ ও বার্ষিক চার্জ
অনেক সময় ক্রেডিট কার্ডের পিছনে যুক্ত থাকে নানা রকম হিডেন চার্জ যা না জেনেই অনেকে ক্রেডিট কার্ড নিয়ে ফেলেন। এসব হিডেন চার্জ আপনার খরচ বাড়াবে। অনেক সময় ক্রেডিট কার্ডের সাথে বিভিন্ন ইন্স্যুরেন্স ফি যুক্ত থাকে। এসব ব্যাপারে জেনে ও বুঝে নিয়ে এরপরই ক্রেডিট কার্ড নেবার ব্যাংক পছন্দ করা উচিত। এছাড়া প্রতিটি ব্যাংকই ক্রেডিট কার্ডের জন্য বার্ষিক একটি ফি নিয়ে থাকে। এই ফি সম্পর্কে ধারণা নিয়ে কম ফি ও ভালো সেবা দেয় এমন ব্যাংক পছন্দ করা উত্তম। এছাড়া হিডেন চার্জের ব্যাপারটিও মাথায় রাখতে হবে।
সুদের হার
ক্রেডিট কার্ডে সুদের হার একটি বড় ব্যাপার। প্রতিটি ব্যাংকে কাছাকাছি সুদের হার থাকলেও বিভিন্ন ধরনের পেমেন্ট ও ক্রেডিটের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শতাংশে ব্যাংকগুলো সুদ নিয়ে থাকে। আর তাই যে ব্যাংকে সবথেকে কম সুদে ও চার্জে সবথেকে বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে সেরকম ব্যাংক পছন্দ করাই ভালো। অনেক ব্যাংকেই নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে বিভিন্ন চার্জ থেকে মুক্তি দেয়া হয়। এসব ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড দেখতে পারেন।
কী কাজে নিচ্ছেন?
আপনি সাধারণত যেসব কাজের জন্য ক্রেডিট কার্ড নিতে চান সেই অনুযায়ী ব্যাংক পছন্দ করতে পারেন। অনেক সময় বিভিন্ন পণ্য ইএমআই এর মাধ্যমে কেনার জন্য ক্রেডিট কার্ড নেন অনেকে। এসময় আপনি যে দোকান বা মার্চেন্ট থেকে সাধারণত পণ্য ক্রয় করেন তাদের সঙ্গে কোন ব্যাংকের চুক্তি আছে এবং বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে সেটি দেখে ক্রেডিট কার্ড পছন্দ করা উচিত। এতে অনেক সময় ০% ইন্টারেস্টে পণ্য ক্রয় করা যায় এবং অনেক চার্জ থেকে বাঁচা যায়। কাজেই যেসব ব্যাংকের অফার এবং মার্চেন্ট চুক্তি বেশি সেসব ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডকে প্রাধান্য দিতে পারেন।
বিদেশে ব্যবহারের সুবিধা
অনেকেই নিয়মিত বিদেশ ভ্রমণ করেন এবং বিদেশেও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন কেনাকাটা বা অন্যান্য কাজে। এসব ক্ষেত্রে দেখে নেয়া উচিত যে ব্যাংক আপনাকে বিদেশে ব্যবহার করার জন্য বাড়তি কোন চার্জ করছে কিনা। যে কার্ডে বিদেশে কেনাকাটার জন্য বাড়তি চার্জ নেই এমন কার্ড নেয়া উচিত। এতে করে অনেক চার্জ থেকে বাঁচা সম্ভব।
ব্যাংক নাকি ক্রেডিট কার্ড প্রতিষ্ঠান?
শুধু ব্যাংক নয়, কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানও বিভিন্ন রকম সুবিধা দিয়ে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে থাকে। ব্যাংক থেকে এরা সাধারণত বেশি সুবিধা দিতে চেষ্টা করলেও ব্যাংকের বেশ কিছু সুবিধা তাদের থেকে পাবেন না। যেমন ব্যাংকের মাধ্যমে আপনি সারা দেশে অসংখ্য শাখা পাবেন বা অনেক ভালো গ্রাহক সেবা পাবেন। কিন্তু ব্যাংক ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট কার্ড নিলে এসব পাবেন না। সুতরাং এগুলো বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
সুতরাং ক্রেডিট কার্ড নেয়ার ক্ষেত্রে কোন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড আপনার জন্য ভালো সেটি নির্ধারণ করতে হবে আপনাকেই। প্রত্যেকের প্রয়োজন ও চাহিদা ভিন্ন হওয়ায় একজনের পছন্দ আরেকজনের সঙ্গে না মেলাটাই স্বাভাবিক। কাজেই ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রেখে তবেই এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।