আসসালামু আলাইকুম।
আশা করি সকলে অনেক ভাল আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে প্যারোডি কী তা তুলে ধরব। চলুন বেশি কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।
গুরুগাম্ভীর কবিতার অনুকরণে রচিত ব্যঙ্গ-কবিতাকে বলে প্যারোডি কবিতা। ধরা যাক আমাদের ভাষার কোনো কবির একটি বিখ্যাত কবিতা আছে। কবিতাটির ভাব খুব গভীর। এখন কোনো ব্যক্তি যদি সেই বিখ্যাত গভীর ভাববিশিষ্ট কবিতাটির ছন্দ ভাষাকে অনুকরণ করে হালকা বিষয় নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক একটি কবিতা লিখে ফেলেন, তবে সেই কবিতাটিকে বলা হবে প্যারোডি কবিতা। প্যারোডি কবিতা কী তা বোঝানোর জন্যে একটা উদাহরণ তুলে ধরলাম। আমরা দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের বিখ্যাত কবিতা ও গান ‘ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা’ সবাই পড়েছি। কবিতাটির মধ্যে মাতৃভূমির প্রতি কবির গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা ব্যক্ত হয়েছে। এই কবিতাটিকেই প্যারোডি করে আর-একটি কবিতা লিখেছেন সতীশচন্দ্র ঘটক। এতে ছন্দ প্রায় মূল কবিতার মতোই, ভাষাতেও রয়েছে মূল কবিতারই অনুকরণ। কিন্তু মূল কবিতার গভীর ভাব এতে নেই। পরিবর্তে আছে হালকা ব্যঙ্গাত্মক বিষয়- কলকাতার এক অফিসের পিয়নের দুর্দশাপূর্ণ জীবনের কৌতুকপ্রদ চিত্র। এ-ধরনের কবিতা পড়তে খুবই মজা। তোমরাও পাশাপাশি কবিতাগুলি পড়লে এই মজা কমবেশি পাবে প্যারোডি কবিতাটি পড়ার পর সেটিকে মূল কবিতার গানের সুরে গাওয়ার চেষ্টা করেই দ্যাখো না, কেমন লাগে!
মূল কবিতা-
আমার জন্মভূমি: দ্বিজেন্দ্রলাল রায়
ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা,
তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা
ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ, স্মৃতি দিয়ে ঘেরা।
কোরাস–
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,
সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি।
চন্দ্রসূর্য গ্রহ তারা, কোথায় উজল এমন ধারা!
কোথায় এমন খেলে তড়িৎ এমন কালোমেঘে!
তার পাখির ডাকে ঘুমিয়ে উঠি পাখির ডাকে জেগে।
কোরাস–
এমন স্নিগ্ধ নদী কাহার, কোথায় এমন ধূম্র পাহাড়!
কোথায় এমন হরিৎ ক্ষেত্র আকাশ তলে মেশে!
এমন ধানের উপর ঢেউ খেলে যায় বাতাস কাহার দেশে!
কোরাস–
পুষ্পে পুষ্পে ভরা শাখী; কুঞ্জে কুঞ্জে গাহে পাখি;
গুঞ্জরিয়া আসে অলি পুঞ্জে পুঞ্জে ধেয়ে-
তারা, ফুলের উপর ঘুমিয়ে পড়ে ফুলের মধু খেয়ে।
কোরাস–
ভায়ের মায়ের এত স্নেহ, কোথায় গেলে পাবে কেহ
ওমা তোমার চরণদুটি বক্ষে আমার ধরি,
আমার, এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি।
মূল কবিতার প্যারোডি
আমার কর্মভূমি: সতীশচন্দ্র ঘটক
ধনমান্য যশে গাঁথা আমাদের এই কলিকাতা,
তার মাঝে এক অফিস আছে, সব আপিসের সেরা
ও যে, ইটপাথরের তৈরি সেটি, রেলিং দিয়ে ঘেরা।
কোরাস–
এমন আপিস কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল বুদ্ধি হানি করা আমার কর্মভূমি।
কেরানি দপ্তরি তারা, কোথায় এমন খেটে সারা,
কোথায় এমন বিষাদ জাগে এমন মলিন মুখে?
ও তার বেলের ডাকে আঁতকে উঠি গভীর মনের দুখে।
কোরাস–
এত রুক্ষ সাহেব কাহার, কোথায় এমন ভর্ৎসনাহার কোথায় এমন লোহিত নেত্র কটমটিয়ে থাকে?
এমন কানের উপর হাত খেলে যায় মৃদু মধু পাকে।
কোরাস–
ঘরে ঘরে এত বাবু, কলম পিষে দেহ কাবু,
এপেন্ট্রিস পড়ে তবু পালে পালে গিয়ে,
তারা টুলের উপর ঘুমিয়ে পড়ে টেবিল মাথায় দিয়ে।
কোরাস–
কেরানিদের শীর্ণদেহ কোথায় এমন পাবে কেহ?
চাকরি মা তোর চরণদুটি নিত্য পূজা করি;
আমার এই আপিসের কর্ম যেন বজায় রেখে মরি।