চাকরি সন্ধানীদের জন্য টেক বা প্রযুক্তি হতে পারে সেরা পছন্দগুলোর মধ্যে একটি ক্ষেত্র। অ্যামাজন, গুগল, মাইক্রোসফট বা মেটা’র মত বড় কোম্পানিগুলো কর্মী ছাটাই করছে শুনে ঘাবড়ানোর কোনো কারণ নেই, কেননা পরিসংখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে এখনো প্রযুক্তি বিশ্বের সর্বোচ্চ বেতনের চাকরিগুলো বিদ্যমান।
প্রযুক্তি বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বেতনের চাকরি কোনগুলো? এই পোস্টে আমরা জানার চেষ্টা করবো প্রযুক্তি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বেতনের চাকরি, সম্ভাব্য বেতন এবং কাজের ধরন সম্পর্কে বিস্তারিত।
ক্লাউড সল্যুশনস আর্কিটেক্ট
একজন ক্লাউড সল্যুশনস আর্কিটেক ক্লাউড কম্পিউটিং সল্যুশনস ডিজাইন, ডেভলাপ ও সেটাপ করে থাকেন। কোনো প্রতিষ্ঠানের ক্লাউড রিসোর্স অপটিমাইজ করে ব্যবসায় সম্পর্কিত চাপ কমিয়ে খরচ কমানোই থাকে একজন ক্লাউড সল্যুশনস আর্কিটেক এর প্রধান কাজ। ডাটা সিকিউরিটি সম্পর্কেও জানা এই কাজে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ডেভলপার ও সিস্টেম এডমিনিস্ট্রেটর এর সাথে একইসাথে কাজ করে থাকেন একজন ক্লাউড সল্যুশনস আর্কিটেক, যার বেতন হতে পারে প্রতি বছর ১ লক্ষ ডলার থেকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার+ ডলার পর্যন্ত।
প্রোডাক্ট ম্যানেজার (সফটওয়্যার)
সফটওয়্যার প্রোডাক্ট ম্যানেজারগণ সফটওয়্যার ডেভলপমেন্ট স্ট্রেটেজি তৈরী ও পরিচালনা করে থাকেন, যাদের বার্ষিক বেতন এক লক্ষ+ ডলার পর্যন্ত হতে পারে। মার্কেট এনালাইসিস এর মাধ্যমে একজন সফটওয়্যার প্রোডাক্ট ম্যানেজার কাস্টমার এর প্রয়োজন, লঞ্চ প্ল্যান, প্রাইসিং মডেল ও নতুন প্রোডাক্ট এর সাফল্য ইত্যাদি বিষয় দেখাশোনা করেন। একজন প্রোডাক্ট ম্যানেজার লং-টার্ম প্রোডাক্ট অবজেকটিভ ও ফিচার ঠিক করেন, ইন্ডাস্ট্রি ট্রেন্ড মনিটর করেন, কোম্পানির অন্যান্য গুরুত্বপূরণ ব্যাক্তিদের সাথে হাতে হাতে কাজ করেন।
সাইবারসিকিউরিটি ইঞ্জিনিয়ার
নাম শুনেই হয়ত বুঝতে পেরেছেন একজন সাইবারসিকিউরিটি ইঞ্জিনিয়ার ডাটা, নেটওয়ার্ক, সিস্টেম, ইত্যাদিকে ক্ষতিকর এটাক থেকে রক্ষা করে থাকেন, যার বার্ষিক বেতন হতে পারে এক লক্ষ+ ডলার পর্যন্ত। একজন সাইবারসিকিউরিটি ইঞ্জিনিয়ার সিকিউরিটি ডিজাইন তৈরি করেন, ডাটার ঝুঁকি পর্যালোচনা করেন, ক্ষতি হওয়ার আগে কোনো ধরনের ঝুঁকি যাচাই করেন ও উক্ত প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন।
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার
একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ব্যবসায়িক প্রয়োজনে সফটওয়্যার ডিজাইন, ডেভলাপ ও মেইনটেইন করে থাকেন। সফটওয়্যার ডেভলপমেন্ট এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কাস্টমারের প্রয়োজন অনুসারে নির্ভরযোগ্য সমাধান তৈরী করেন একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। সফটওয়্যার কোয়ালিটি স্ট্যান্ডার্ডে পৌঁছাতে পেরেছে কিনা তা অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ার, টেস্টারদের সাথে কাজ করে বের করেন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এর বার্ষিক বেতন এক লক্ষ+ ডলার হতে পারে, এটি সাধারণত একটি ডেস্ক জব ও অধিকাংশ কাজ অবশ্যই কম্পিউটারেই করা হয়ে থাকে।
ব্লকচেইন ইঞ্জিনিয়ার
ব্লকচেইন শব্দটি অধিকাংশ মানুষের কাছে নতুন হলেও বর্তমান বাজারে ব্লকচেইন ইঞ্জিনিয়ার এর ডিমান্ড অনেক। একজন ব্লকচেইন ইঞ্জিনিয়ার সাধারণত ব্লকচেইন সল্যুশনস তৈরী, ডেভলাপ ও মেইনটেইন করে থাকেন। ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার টেকনোলজি (DLT) ব্যবহার করে ডাটার সুরক্ষা নিশ্চিত, লেনদেন নিরাপদ ও নতুন বিজনেস মডেল তৈরী করেন একজন ব্লকচেইন ইঞ্জিনিয়ার।
কাস্টমারের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্লকচেইন সল্যুশন তৈরী করা ও টেকনিক্যাল সমস্যা খুঁজে বের করে সেগুলোর সমাধান করেন ব্লকচেইন ইঞ্জিনিয়ার, বছরে যার বেতন হতে পারে ৯০ হাজার+ ডলার পর্যন্ত। প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ এর পাশাপাশি আরো অনেক ধরনের টেকনিক্যাল জ্ঞান থাকা লাগে এই কাজের ক্ষেত্রে।
ফুল স্ট্যাক ডেভলপার
কোনো অ্যাপের ফ্রন্ট-এন্ড ও ব্যাক-এন্ড, উভয় দিক নিয়েই কাজ করেন এমন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারমে ফুল-স্ট্যাক ডেভলপার বলা হয়ে থাকে। ফুল স্ট্যাক ডেভলপারফণ ইউজার ইন্টারফেস তৈরী করেন ও একইসাথে সেগুলোর জন্য ডাটাবেস তৈরী করা, ইউজার ম্যানেজমেন্ট, ফ্রেমওয়ার্ক মেনটেইন ইত্যাদি কাজও করে থাকেন। একাধিক বিষয়ে পারদর্শী হওয়ায় একজন ফুল স্ট্যাক ডেভলপার এর ডিমান্ড অনেক বেশি। একজন ফুল স্ট্যাক ডেভলপার তার কাজের উপর নির্ভর করে বড় অংকের আয় করতে পারেন।
ইউএক্স ডিজাইনার
ইউএক্স ডিজাইনারগণ ব্যবহারযোগ্য আকর্ষণীয় ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ডিজাইন করে থাকেন। প্রোডাক্ট টিমের সাথে একইসাথে কাজ করেন একজন ইউএক্স ডিজাইনার যার মাধ্যমে সাধারণভাবে ব্যবহারযোগ্য প্রোডাক্ট তৈরী করা হয়। কাস্টমার ফিডব্যাক গ্রহণ করে ইউজার ইন্টারফেসকে উন্নত করে পূর্বের চেয়ে অধিক ব্যবহারযোগ্য করা একজন ইউএক্স ডিজাইনার এর কাজ। মূলত অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে স্মুথ ইউজার এক্সপেরিয়েন্স নিশ্চিত করার দায়িত্ব ইউএক্স ডিজাইনার এর কাছে থাকে। ইউএক্স ডিজাইন এর এই প্রক্রিয়াতে ইউজার ফ্লো ও ন্যাভিগেশন পরীক্ষা করতে প্রোটোটাইপ তৈরী করা ও রিভিউ-ফিডব্যাক এর জন্য হাই কোয়ালিটি মক-আপ তৈরি করেন ইউএক্স ডিজাইনার। এইক্ষেত্রে ডিজাইন এর পাশাপাশি প্রোগ্রামিং সম্পর্কেও ধারণা রাখার প্রয়োজনও পড়ে।
ডিজিটাল মার্কেটিং ম্যানেজার
ডিজিটাল মার্কেটিং শব্দটি বর্তমানে অনেক বেশি ব্যবহৃত হলেও একজন ডিজিটাল মার্কেটিং ম্যানেজার এর চাহিদা কিন্তু অনেক বেশি। একজন ডিজিটাল মার্কেটিং ম্যানেজার অনলাইনে প্রোডাক্ট ও সার্ভিস প্রোমোট করতে প্ল্যান ও স্ট্রেটেজি তৈরী করে থাকেন। তার কাজের মধ্যে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে ক্যাম্পেইন চালানো, সার্চ ইঞ্জিন, ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন, ওয়েবসাইটের কনটেন্ট অপটিমাইজ করে ট্রাফিক আনাও পড়ে। একজন ডিজিটাল মার্কেটার এর এনালিটিক্স সম্পর্কে বেশ ধারণা থাকা প্রয়োজন যাতে পরবর্তী ক্যাম্পেইনগুলো সফলভাবে চালনা করা যায়।
ডাটা এনালিস্ট
বর্তমানে সবচেয়ে ডিমান্ডিং টেক স্কিল এর মধ্যে একটি হলো ডাটা এনালিস্ট। একজন ডাটা এনালিস্ট বিভিন্ন মাধ্যম থেকে ডাটা কালেক্ট করেন, সেগুলো অরগানাইজ করে এনালাইজ করেন যা পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে কাজে আসে। স্ট্যাটিসটিক্যাল টুল ও টেকনিক ব্যবহার করে একজন ডাটা এনালিস্ট ডাটসেট থেকে গুরুত্বপূর্ণ ইনসাইট খুঁজে বের করেন ও এনালাইসিস উপস্থাপন করেন। একজন ডাটা এনালিস্ট এর ম্যাথমেটিকস, স্ট্যাটাটিস্টিকস, স্প্রেডশিটস, ডাটাবেস, প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ, ইত্যাদি বিষয়ে অত্যাবশ্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন।
ওয়েব ডেভলপার
একজন ওয়েব ডেভলপার কোনো ব্যবসাকে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে পৌঁছাতে ওয়েবসাইট বা ওয়েব-ভিত্তিক অ্যাপ তৈরী করে থাকেন। একজন ওয়েব ডেভলপার গ্রাফিক্স, ওয়্যারফ্রেম ও কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম নিয়ে কাজ করেন ও ইউজার-ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেস তৈরী করেন। এর পাশাপাশি ওয়েবসাইট এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও একজন ওয়েব ডেভলপার এর কাজের মধ্যে পড়ে। সকল ডিভাইসে যাতে ডেভলাপ করা প্রোডাক্ট সাবলীলভাবে কাজ করে তার দায়িত্ব একজন ওয়েব ডেভলপার এর কাঁধেই থাকে।
এই ছিলো সবচেয়ে বেশি চাহিদাপূর্ণ কিছু প্রযুক্তিগত দক্ষতা। আমাদের সাধারণ আয়-রোজগার সম্পর্কিত পোস্টের চেয়ে এই পোস্টটি কিছুটা ব্যাতিক্রমধর্মী ছিলো। এই পোস্টে আমরা পাঠকদের এমন সব দক্ষতা সম্পর্কে জানাতে চেয়েছি যার চাহিদা সম্পূর্ণ বিশ্বেই রয়েছে। তাই আপনি যদি এমন কোনো দক্ষতা অর্জন করতে চান যা বিশ্বের যেকোনো দেশে আপনাকে মোটা অংকের বেতনের চাকরি বা কাজ এনে দিতে পারে, হয়ত উল্লিখিত তালিকা আপনার কাজে আসতে পারে।