শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের পোস্ট শুরু করছি
আজকে আমি ব্রেকডাউন করতে চলেছি ফেসবুকের সেসব মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিকে যেগুলো খুবই অহরহ ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে ফেসবুক খুললেই দেখবেন নানারকম অনলাইন ব্যাবসায় আপনার নিউজফিড ভর্তি।অনেকে সেসব বিষয়কে এড়িয়ে চলেন আবার অনেকে এসব পোস্টের সাথে নিজেকে Relevant মনে করেন। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন কেন অনেকে খুবই অর্গানিকভাবে লাইক কমেন্ট বেশি করে পায় তাদের বিজনেস পেজে?এর পেছনে কারন হচ্ছে মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি।একটা ব্যাবসা করার জন্য প্রয়োজন অনেক বেশি কাস্টমারদের নিজেদের পন্যের সাথে পরিচয় করানো।এজন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে শুরু হয়েছে একের পর এক ক্রিয়েটিভ পদ্ধতি।যার মার্কেটিং করার পদ্ধতি যত ভালো তার ব্যাবসা টিকে থাকার সম্ভাবনা তত বেশি উজ্জ্বল। আজকে আপনাদের দেখাবো সেসব পদ্ধতিগুলোকে যেভাবে তারা মানুষজনদের ইনফ্লুয়েন্স করে:
১.কুইজ জিজ্ঞাসা
অর্গানিকভাবে রিচ পাওয়ার একটি অন্যতম পদ্ধতি হচ্ছে এটি। মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির একটি অন্যতম হলো অন্যদের মাঝে নিজেদের জ্ঞান যাচাই করা। এ বিষয়টিই একজন ফেসবুক মার্কেটার টার্গেট করে থাকেন।তারা একটি কুইজ বা ধাঁধা অডিয়েন্সদের দেয়।এসব কুইজ এমন ক্রিয়েটিভভাবে করা হয় যাতে যারা সে পোস্টটি দেখেন তারা সেটির উত্তর ভাবতে থাকেন।এটি অনেকসময় জটিল করা হয় আবার অনেকসময় এমনভাবে করা হয় যাতে আপনি একটু ভেবেচিন্তে সঠিক উত্তর দিতে পারেন। যখন সঠিক উত্তর দিবেন তখন কিন্তু তারা এর কমেন্টের রিপ্লাই এ এপ্রিশিয়েটমূলক কথাবার্তা লেখে। এতে মানুষজনের মাঝে একটা উইন উইন মভোভাব তৈরী হয়। ফলে তারা তাদের পন্য কেনায় আগ্রহী হয়ে ওঠে। এটির মূল উদ্দেশ্য বেশি করে কমেন্ট কালেক্ট করা।
২.মিম মার্কেটিং(Meme marketing)
একজন কাস্টমারের মুখে হাসি ফোটানোকে অনেক কাস্টমার টার্গেট করে থাকে।আর এ কারণে এখনকার সময়ে Meme marketing বেশ অব্যর্থ একটা পদ্ধতি বলা যায়।
এ পদ্ধতি নির্ভর করে কত ভালো ক্রিয়েটিভভাবে meme তৈরী করা যায় কিংবা ফানি কোন ছবি দেয়া যায় তার উপর। অডিয়েন্স যখন এসব দেখে ফানি মনে করে অজান্তেই নিজের টাইমলাইনে শেয়ার দেয় তখনই এ ট্রিক শতভাগ পূর্ন পায়। কারন তার টাইমলাইনে অন্য কেউ দেখে আরো সেও শেয়ার করল এরকম loop তৈরী হয়ে থাকে। মাঝখান দিয়ে কোম্পানির প্রমোশন হয়ে যায়। নিজেদের বিজনেস কে আরো অডিয়েন্সদের সাথে engaged করতে এটি বেশ ভালো একটি পদ্ধতি।এ ক্ষেত্রে সমসাময়িক ঘটনা, ভাইরাল টপিক নিয়ে meme তৈরী করে ঐ meme এর ভিতরে নিজেদের পন্য জুড়ে দিয়ে মার্কেটিং করা যায়।এটা ইদানিং বেশ জনপ্রিয় হয়েছে।
৩.স্টক শেষের দিকে পদ্ধতি
মানুষজনদের উপর প্রেসার ক্রিয়েট করার উপর এ পদ্ধতি কাজ করে। সাধারনত কাপড় ব্যাবসায়ীরা এটি বেশি করে থাকে। এজন্য তারা তাদের পন্যের বেশ ভালো কিছু ছবি দিয়ে জানিয়ে দেয় স্টক শেষের দিকে।একই সাথে জানিয়ে দেয় পরে পাবেন না দ্রূত অর্ডার করূন এমন।এর ফলে যারা কেনার জন্য উৎসাহিত হয়েছিল তারা সাইকোলজিক্যাল প্রেসার ফিল করে।যার কারনে তারা কিনতে অনেক আগ্রহী হয়।এতে প্রচুর সেলস জেনারেট হয়ে থাকে।
নিজেদের পন্য এভাবে মার্কেটিং করলে বেশ দ্রুত সেলস টার্গেট পূরণ হতে পারে।
৪.নেগেটিভ ইন্ট্রো মার্কেটিং
সাধারনত ফুড ও বেকারি আইটেমের সেলাররা এ পদ্ধতি ফলো করে থাকেন। এটি ভালোভাবে বোঝানোর জন্য নিচে দুইটি উদাহরন দিলাম
ভাইয়া আমার লস হয়ে গেছে
আপনি আমাকে একি দিলেন
অতপর নিচের দিকে লম্বা প্যারাগ্রাফ
উপরে দুইটা লাইন পড়ে আপনার কি মনে হচ্ছে? সেলারের আইটেম কিনে কাস্টমার ধোকা খেয়ে গেছে? কাস্টমার প্রতারনার শিকার হয়েছে? ভুল! আপনি যদি আরো নিচের লেখাগুলো পড়ে থাকেন তাহলে বুঝতে পারবেন ইন্ট্রো এর সারমর্ম হচ্ছে কাস্টমারের লস হয়েছে কেননা সে কেন বেশি করে কেনে নাই অথবা খেতে খুবই ভালো হয়েছে যে কারনে বলছে আপনি আমাকে একি দিলেন?!
এটাই হচ্ছে নেগেটিভ ইন্ট্রো মার্কেটিং।এর ফলে তারা কাস্টমারদের পন্যের বিবরন পড়তে আগ্রহী করে তোলে। মানুষজন প্রোডাক্ট কিনুক বা না কিনুক ইন্ট্রো এর কারনে সবাই একটু হলেও পড়ে দেখে।যারা হোমমেইড ফুড আইটেম সেল করে তাদের মাঝে এ মার্কেটিং ট্রিকসটি ফলো করার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
৫.গিভওয়ে মার্কেটিং
এটাও বলা চলে মোটামুটি ৯৯ ভাগ সফল মার্কেটিং পদ্ধতি।যারা বিশেষ করে জার্সি সেল করে তারা বিষয়টি ফলো করে থাকে। কোনো ইন্টারনেশনাল ম্যাচের প্রেডিকশন করেই জার্সি জিতে নিতে পারবেন এমনভাবে মার্কেটিং করা হয়।তবে বেশ ভালোরকম শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। এক্ষেত্রে কমন হচ্ছে ১০ জনকে ম্যানশন করতে হবে কিংবা নিজের টাইমলাইনে ১০ জনকে ট্যাগ দিয়ে শেয়ার করতে হবে এরকম। এর ফলে অনেক বেশি অডিয়েন্সদের সাথে বিক্রেতার পরিচয় ঘটে কারন মানুষ ফ্রি তে কি না চায়! এতে অনেকে খুবই উৎসাহী হয়ে এসব প্রসিডিউর ফলো করে থাকে। এতে অল্প খরচে অনেক বেশি অডিয়েন্স পাওয়া যায়। যত বেশি অডিয়েন্স তত ভালো সেল করার চান্স বেশি।তবে কিছু অসাধু ব্যাবসায়ী ফেইক আইডি দিয়ে আগেই ভিন্ন ভিন্ন প্রেডিকশন করে থাকে। অতপর তারা নিজেরাই নিজেদের মধ্য থেকে উইনার সিলেক্ট করে। এটাই এ মার্কেটিং এর নেগেটিভ সাইড।
নিজেদের পেজ বুস্ট করার জন্য এটি বেশ ভালোরকম পদ্ধতি।এখানে এক ঢিলেই অনেক পাখি মারা যায়।
অর্গানিকভাবে যেমন লাইক কমেন্ট পাওয়া যায় তেমনি প্রচুর শেয়ারও হয়। ভবিষ্যতে বিজ্ঞাপন পোস্ট করলে অনেক দ্রূত অনেক মানুষের কাছে পৌঁছে যায়।
৬.স্ক্রিনশট কনভারসেশন
আপনারা হয়তো অনেকে বিভিন্ন স্ক্রিনশট পোস্টিং দেখে থাকবেন।কি মনে হয় এগুলো Random ঘটনা?এখানেও মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি কাজ করে।এখানে এক ছবিতেই দুটো স্টোরি থাকে।একটি কাস্টমারের সাথে কনভারসেশন এর আরেকটি নিজেদের ব্র্যান্ড এর বিজ্ঞাপনের ।এখানে খুব সুক্ষভাবে মার্কেটিং কাজ করে। ফেসবুক যারা নতুন ইউজার এ মার্কেটিং সেটি টার্গেট করে। এখানে মূলত মজার ছলে মার্কেটিং করা হয়।আবার রিভিউও অনেকে পোস্ট করে। আপনাদের যাদের বিজনেস আছে তারাও এটা ট্রাই করতে পারেন।বলা চলে এটা প্রাথমিক একটা মার্কেটিং।
৭.ইমোশনাল মার্কেটিং
এটি বেশ ভালো একটি পদ্ধতি।এখানে মূলত একটি ইমোশনাল ঘটনার বর্ননা করা হয়। যার ফলে যারা অডিয়েন্স তাদের থেকে ভালো ইমপ্রেসন আসে।এটি আরেকটু ভালোভাবে যদি বলি ধরা যাক একটি রেস্টুরেন্টে ব্যাবসার কথা চিন্তা করা যাক। এখন ঐ ব্যাবসার মালিক চাইলে ইমোশনাল মার্কেটিং করতে পারে এবং এটা হয়েই আসছে।এর মধ্যে একটি অন্যতম হলো রেস্টুরেন্ট কর্মচারীদের কোন সারপ্রাইজ গিফট দেয়ার উপর মার্কেটিং, ছোট ছোট বাচ্চাদের খাবারের সাথে এক্সট্রা আইটেম দিয়ে মার্কেটিং এমন। এক্ষেত্রে কি দেয়া হচ্ছে সেটা ইম্পরট্যান্ট না। ইম্পরট্যান্ট হচ্ছে কত ভালোভাবে ভোক্তার ইমোশনে জায়গা করা যায়। আবার বড় বড় কোম্পানি তাদের প্রচারের সময় ইমোশন টার্গেট করে থাকে। এটি হতে পারে তারন্য,ক্রিকেট,ফ্যামিলি এমন।ব্র্যান্ডিং গড়ার ক্ষেত্রে এটি একটি ভালো মাধ্যম হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ পেপসি এর কথাই উল্লেখ করা যাক। তাদের অ্যাডভার্টাইজমেন্টএ দেখবেন তারা Energetic Youth কে টার্গেট করে এর উপর মার্কেটিং করে থাকে। এর ফলে টার্গেটেড ভোক্টাদের মনে একটা পজিটিভ ইমপ্রেসন পাওয়া যায়।
৮.অথেন্টিক প্রোডাক্ট প্রচারনা মার্কেটিং
সিম্পল একটা ট্রিকস দেখেন-
এক মেয়ের সাবান চেয়ে করা পোস্টে সবাই কমেন্ট করল ওই সাবান ৪৫০ টাকা।
এক সেলার কমেন্ট করল ৫২০ অরিজিনালটা। নকল প্রমাণ হলে ফেরত। তার কমেন্টে রিপ্লাই পড়ল অর্ডার করলে কবে পাওয়া যাবে?
এখানে একটা বিষয় কিন্তু নিশ্চিত ৪৫০ টাকা দিয়ে ওরা যা দিচ্ছে সেটাও কিন্তু অরিজিনাল। কিন্তু আপনার উপর কেন ওরা বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে? কারন সবার মনে এ ধারনাই হয়েছে যত দামী তত অরিজিনাল। আর এটার উপরই কিন্তু ভালো একটি মার্কেটিং করা যায়।ব্যাবসায় ভালো প্রফিট আসে।যারা বিশেষ করে ইমপোর্টেড প্রোডাক্ট সেল করে তাদের জন্য এটি বেশ লাভজনক পদ্ধতি বলা চলে।যেহেতু বিফলে মূল্য ফেরত বলে মার্কেটিং করা হয় তাই কাস্টমারদের বিশ্বাস দ্রুত অর্জন করা যায়।ব্যাবসায় টিকে থাকতে কাস্টমারদের বিশ্বাস অর্জন করা একটি মেজর টার্গেট।
৯.Aesthetic Products Photography marketing
আপনার পন্য ভোক্তাদের নিকট কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা পাবে তা নির্ভর করছে আপনি আপনার প্রোডাক্টটি কত ইউনিকভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন তার উপর।একটা ব্যাবসা ভালো করার জন্য প্রোডাক্টের ফটোগ্রাফি খুবই ভালো হতে হয়। বিভিন্ন ব্যাবসায়ীরা এজন্য Aesthetic ভাবে উপস্থাপন করে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ যারা নোটবুক,ডায়েরি অনলাইনে সেল করে তাদের প্রোডাক্টসগুলো দেখবেন খুবই eye-catchy ভাবে ছবি তোলা। আবার অনেকে theme অনুয়ায়ী প্রোডাক্টগুলো ডিজিটাল আর্টরূপে উপস্থাপন করে।এটিও একটি খুবই ভালো মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি।
১০•অফার মার্কেটিং
ভালো সেল জেনারেট করার এটা একটি অন্যতম মাধ্যম।অনেক পেজই এটা করে থাকে। এখন মনে প্রশ্ন আসতে পারে অফারেই যদি দেই তাহলে প্রফিট কম হবে না তো? উত্তর হলো না।খেয়াল করে দেখুন অফারের ক্ষেত্রেও সূক্ষভাবে সেল জেনারেট করা যায়। বেশিরভাগই দেখা যায় একটা নির্দিষ্ট এমাউন্টের কেনাকাটা করতে হবে এ ধরনের শর্ত জুড়ে দেয়া থাকে। এটি এমনভাবে করা হয় যাতে অফার বা ছাড়ে দেয়ার পরও ভালো লাভ হয় কারন ঐ অফার ক্লেইম করতে কাস্টমারকে বড় এমাউন্টের কেনাকাটা করতে হয়। নিজেদের পেজ প্রচারনার জন্য এটিও একটি বেশ ভালো মাধ্যম বলা চলে।
আজ এ পর্যন্তই। এ পোস্টে আমি খুবই সহজভাষায় আপনাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি ঐসব মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিগুলো যেগুলো এখন প্রায়ই প্রচলিত এবং বলা চলে বেশ কাজেরও। আপনারা যারা অনলাইনে সেল করেন তারা এসব টিপস ফলো করতে পারেন।আশা করি আজকের পোস্ট আপনাদের ভালো লেগেছে। ভালো লাগলে নিচে আমার অন্যান্য পোস্টও পড়তে পারেন। ট্রিকবিডিতে সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।